বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার ফুলহাতা এলাকায় মসজিদ ও বসতবাড়ির জমি দখলে নিতে শামীম হোসেন শাওন (৩৮) নামের এক ব্যক্তিকে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে। মিথ্যা মামলা, মারধরের চেষ্টা, এলাকা ছাড়তে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এই অবস্থায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বাবা-মা হারা শামীম হোসেন শাওন। নিজের জান-মাল রক্ষায় পুলিশ-প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। শামীম হোসেন শাওন ফুলহাতা গ্রামের মৃত এম মহসিন হোসেনের ছেলে। অভিযুক্ত মোঃ নোমান হোসেন মোল্লা মৃত ফেরদাউস মোল্লার ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, ১৯৯৫ সালে ফুলহাতা এলাকায় বায়তুল মামুর জামে মসজিদ নির্মান করেন দেন বিশিষ্ট শিল্পপতি এম মহসিন হোসেন। মসজিদের অনুকূলে প্রায় ৫০ বিঘা জমি দান করেন তিনি। স্বপ্ন ছিল মসজিদের সাথে মাদরাসা ও ইয়াতিমখানা করার। দান করা জমি থেকে যে আয় হবে, সেই আয়ে দিয়ে চলবে এই প্রতিষ্ঠান এবং এইসব পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে গেছেন তার ছেলে শামীম হোসেন শাওনকে। শামীম হোসেন শাওনের পরিচালনা অনুযায়ী সবকিছু ঠিকঠাক চললে, বাধা দাঁড়িয়েছে তার ভাইয়ের ছেলে মোঃ নোমান হোসেন মোল্লা (৪৬)। তিনি শামীম হোসেন শাওনের নামে একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়েছে। শাওনকে হত্যার হুমকিও দিয়েছে। মসজিদটি সঠিকভাবে পরিচালনা ও শামীম হোসেন শাওনের ন্যায্য অধিকার রক্ষায় মোঃ নোমান হোসেন মোল্লার হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় আলী আকবর মোল্লা বলেন, এম মহসিন হোসেন একজন ভালো মানুষ ছিলেন। সে মারা যাওয়ার আগে পঞ্চাশ বিঘা জমি মসজিদ মাদ্রাসা এতিমখানার জন্য দান করে গেছেন। তার ছেলে শামীম হোসেন শাওনকে পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে গেছেন সে সঠিকভাবে পালন করছে।
দিঘি লীজ নেওয়া শহীদ জোমাদ্দার বলেন, আমি শাওন ভাইয়ের কাছ থেকে দুই বছরের জন্য হাড়ি দিয়ে নিয়েছি। ২০২৪ সালের ৫ জুলাই এর পর তার চাচাতো ভাই নোমান মোল্লা এসে আমাকে বলে এই দিঘি এই জমি আর শাওনের নেই যদি এই দিঘিতে মাছ চাষ করতে হয় তাহলে আমাকে নতুন করে টাকা দিবি তা না হলে তিন দিনের ভেতর এখান থেকে চলে যাবি এরকম হুমকি দিতে থাকে। আমাকে হয়রানী করার ভয়ভীতি দিয়ে জোরপূর্বক ২৪ হাজার টাকা নেয় নোমান মোল্লা। আমি গরিব মানুষ উপরে আল্লাহ পাক ছাড়া আমার কেউই নেই।
বায়তুল মামুর জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আরব আলী বলেন, আমি এই মসজিদে ছয় বছর ধরে ইমামতি করি। মহসিন সাহেব যে জায়গা জমি রেখে গেছেন তার ছেলে শাওন এই সবকিছু দেখাশোনা করেন এবং প্রতি মাসে সেখান থেকে আমাদের বেতন দিয়ে থাকেন। এছাড়া এলাকাবাসীরাও খুব আন্তরিক, মসজিদ পরিচালনায় তারা প্রতিনিয়ত আর্থিক অনুদান বা বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা করে থাকে।
অভিযুক্ত মোঃ নোমান হোসেনের আপন ভাই কবির হোসেন মোল্লা বলেন, নোমান অনেক হিংস্র মানুষ। সে জমি সংক্রান্ত কারণে আমার নামেও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা করেছে। আসলে সে মানুষের শান্তি সহ্য করতে পারে না। আমার চাচা এম মহসিন হোসেন তিনি মৃত্যুর আগে সবকিছুরই দলিল পত্র করে তার ছেলে শামীম হোসেন শাওনকে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন এখন আমার ভাই নোমান কি কারণে তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে যাচ্ছে আমার এটা জানা নাই।
ভুক্তভোগী শামীম হোসেন শাওন বলেন, আমার বাবা মারা যাওয়ার আগে এই মসজিদ মাদ্রাসার ও এতিমখানার নামে ৫০ বিঘা জমি ওয়াকফ করে আমাকে মাতোয়ালি রেখে যান, সবকিছু পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে দিয়ে গেছেন। তার মারা যাওয়ার পর আমি এই ১৬ বছর ধরেই সঠিকভাবে দেখাশোনা করে আসছি। এই ৫০ বিঘা জমি থেকে যে আয় আসে তা দিয়েই মসজিদ পরিচালনা করা হয়, যেখানে আমারও একটা বেতন আছে। কিন্তু কিছুদিন থেকেই আমার আপন চাচাতো ভাই নোমান হোসেন মোল্লা এই মসজিদ মাদ্রাসা এতিমখানার ও বসতি বাড়ির জমি জায়গা দখল নেওয়ার জন্য আমার নামে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। দানকৃত জমির ওপর থেকে বেশ কিছু গাছপালা কেটে নিয়ে বিক্রি করে। এই দুই দিন আগে ও আমার নামে আবার একটা মামলা দিয়েছে সাথে নিরীহ একটা ছেলে মোঃ রিয়াজ মোল্লার নামে চাঁদাবাজি মামলা দিয়েছে। আমাকে মেরে ফেলার হুমকিও দিচ্ছে। আমি পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের কাছে সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করছি যে আমাকে এই মিথ্যা মামলা হয়রানির থেকে সঠিকভাবে তদন্ত করে আগে মুক্তি দেন এবং নোমান মোল্লা যাতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায় সেই দাবি জানাই।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত মোঃ নোমান মোল্লা কে বার বার ফোন করলে ফোন ধরে তিনি সাংবাদিকের পরিচয় দেন। পরবর্তী তাকে প্রশ্ন করলে ফোন কেটে দেন এরপর আর ফোন ধরেনি।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, শাওনের বাবা এলাকার মানুষের জন্য মসজিদ করেছেন। অনেক জমি দানও করেছেন। কিন্তু শাওনের চাচাতো ভাই মোঃ নোমান হোসেন মোল্লা এখন দানের জমি ও তার শাওনের বাড়ির জমি জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন। এটা অনৈতিক, আমরা এর একটা সমাধান চাই।